ঘড়ির কাঁটায় রাতে দেড়টা। কুয়াশা ভেসে বেড়াচ্ছে, চারদিকে নীরবতা, ঘুটঘুটে অন্ধকারে হালকা শীতে শরীর কাঁপছে। এমন নিস্তব্ধতায় জেগে ওঠে দরজার কড়া নাড়া। ভেতর থেকে ভেসে আসে, কেরা? দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি ছিলেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুব হাসান। ঘুম জড়ানো চোখে বাইরে এসে অবাক হয়ে যান প্রতিবন্ধী ফিরোজা বেগম ও তার মেয়ে শিল্পী খাতুন। পরে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় খাদ্যসামগ্রী।বুধরার রাত (২৯ অক্টোবর) গভীর রাতে উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের মধ্য জগৎপুরা গ্রামে দৃষ্টি ও মানসিক প্রতিবন্ধী ফিরোজা বেগম এবং তার মেয়ে শিল্পী খাতুনের বাড়িতে ত্রাণ পৌঁছানোর এক মুহূর্তের ভিডিও শেয়ার করেছেন ইউএনও অফিসের এক কর্মচারী।জানা গেছে, জগৎপুরা গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাসমত মোল্ল্যা ছোটবেলায় জ্বরের কারণে দৃষ্টি হারান। যমুনার ভাঙনে বসতবাড়ি বিলীন হওয়ায় তিনি মধ্য জগৎপুরা সড়কের পাশে একটি টিনের ঘর বানিয়ে স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী মেয়ের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি গত বছর মারা যান। স্ত্রী ফিরোজা বেগম মানসিক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী, মেয়ে শিল্পীর দুটি পা বিকল, তাই হামাগুড়ি দিয়ে চলাচল করেন। সরকারি ভাতা থাকলেও তা যথেষ্ট নয়, তাই জীবনধারার জন্য শিল্পী রাস্তায় ও হাটবাজারে বসে ভিক্ষা করেন।বুধবার রাত ১২টার দিকে ইউএনও ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে একটি স্ট্যাটাসের সঙ্গে তিনজন প্রতিবন্ধীর ছবি দেখেন। সেখানে লেখা ছিল, দীর্ঘদিন ধরে খেয়ে না খেয়ে এই পরিবারটি দিন কাটাচ্ছে। ছবি দেখে স্থির থাকতে পারেননি ইউএনও। তাৎক্ষণিক স্থানীয় মেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত হন। এরপর সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার ৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে ৮-৯ কিলোমিটার দূরে ওই গ্রামে পৌঁছান।
উপজেলা পরিষদের এক কর্মচারী সময়ের কণ্ঠস্বরকে জানান, স্যার গভীর রাতে মেসেজ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চলে গেছেন। এসময় প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ অফিসের আরও ৩ জন ছিলেন। এছাড়া গভীর রাত হওয়ায় পুলিশের একটি দলও সঙ্গে নেওয়া হয়। খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ছিল চাল, ডাল, তেলসহ মোট ৮টি আইটেম, ২০ কেজির দুটি প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। আশা করি, কমপক্ষে ২০-৩০ দিন তাদের ভালোভাবে চলতে সাহায্য করবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাতে ইউএনও মো. মাহবুব হাসান মুঠোফোনে সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, রাত ১২টার দিকে ফেসবুক পোষ্টটি দেখে আর ঠিক থাকতে পারিনি। আমার মনে হলো যতক্ষণ দেরি করব, ততক্ষণ এই কাজ সঠিক হবে না। তাই রাতেই চলে যাই। যদিও ছবিটি ২-৩ বছর আগের, কেউ সম্প্রতি পুনরায় শেয়ার করেছেন। ঘটনাটি পুরোনো হলেও সঠিক। গিয়ে জানতে পারলাম, বাবা মারা গেছেন, মা-মেয়ে থাকছেন। দুজনেই প্রতিবন্ধী। তিনি জানান, মেয়েটির দুই পা নেই, মা বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী। আমরা স্থায়ীভাবে কিছু করার পরিকল্পনা করছি। একটি ছোট দোকান দিয়ে তাদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই, যেন তারা বসে বসে এটি পরিচালনা করতে পারে। খুব শিগগিরই এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। এসময় ইউএনও আরও বলেন, শুধু প্রতিবন্ধী ফিরোজা বেগমের জন্য নয়, যদি কারো জানা থাকে উপজেলার কোনো এলাকায় এমন কোনো দুস্থ বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যাদের সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন, আমাদের জানালে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব। এসকে/আরআই
Saturday 1 November 2025
somoyerkonthosor - 2 days ago
