সংঘাতে বিধ্বস্ত আফ্রিকার দেশ সুদানের এল-ফাশার শহরে মানুষের জন্য ভয়াবহ প্রাণঘাতী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে চিকিৎসাবিষয়ক আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ)। এল-ফাশার শহরের নিয়ন্ত্রণ দেশটির আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) দখলে যাওয়ার পর সেখানে ব্যাপক অমানবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
শনিবার এমএসএফের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৮ মাসের অবরুদ্ধ দশার পর গত ২৬ অক্টোবর এল-ফাশার শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় আরএসএফ। এরপর থেকে সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সহিংসতা চালিয়েছে ওই বাহিনী। হত্যা, নিপীড়ন ও তীব্র খাদ্য সঙ্কট থেকে বাঁচতে শহরটির হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
বিবৃতিতে এমএসএফ বলেছে, ‘‘এই সপ্তাহে এল-ফাশার ও আশপাশের এলাকায় নির্বিচারে জাতিগত ভয়াবহ গণহত্যা ও নৃশংসতা চালিয়েছে আরএসএফ।’’ সংগঠনটি বলেছে, অনেক মানুষ মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছেন এবং র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস ও তাদের সহযোগীরা লোকজনকে নিরাপদ এলাকায় পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে।
এমএসএফের জরুরি বিভাগের প্রধান মিশেল অলিভিয়ে লাশারিতে বলেন, এল-ফাশারের পার্শ্ববর্তী নিরাপদ শহরে তাওইলায় পৌঁছানো মানুষের সংখ্যা বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না। সেখানে গণহত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে। যারা এল-ফাশারে মাসের পর মাস দুর্ভিক্ষ ও সহিংসতার মাঝেও বেঁচে ছিলেন; তারা কোথায়?
তিনি বলেন, এল-ফাশারের বাসিন্দাদের পালিয়ে যাওয়ার সময় হত্যা করা হয়েছে অথবা তাদের আটকে রেখেছে আরএসএফ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা এল-ফাশারে জাতিগত নিধনের ঘটনা ঘটছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
তারা বলেছে, ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে দারফুরে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের পুনরাবৃত্তি ঘটছে এল-ফাশারে। সেই সময়ের আরব জানজাউইদ মিলিশিয়া থেকেই গঠিত হয়েছিল বর্তমান আরএসএফ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে এমএসএফ বলেছে, গত ২৬ অক্টোবর এল-ফাশারের প্রায় ৫০০ বেসামরিক নাগরিক, সেনাবাহিনীর সদস্য এবং সরকার-সমর্থিত যৌথ বাহিনীর সদস্যরা একসঙ্গে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই আরএসএফ ও তাদের মিত্রদের হাতে হত্যার শিকার অথবা আটক হয়েছেন।
সেখান থেকে বেঁচে ফেরা বাসিন্দারা বলেছেন, পালানোর সময় মানুষকে লিঙ্গ, বয়স ও জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে আলাদা করা হয়। অনেকে এখনো মুক্তিপণের জন্য আটক রয়েছেন। আরএসএফের নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘যোদ্ধারা বন্দীদের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেন; এমন ভয়ঙ্কর দৃশ্যও আমি দেখেছি।’’
জাতিসংঘ তথ্য অনুযায়ী, সুদানে চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার নিহত ও লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সঙ্কটে পরিণত হয়েছে সুদানের এই সংঘাত।
২০২৩ সালের এপ্রিলে সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও আরএসএফ প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ দাগলোর মধ্যে ক্ষমতা দখলের লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে এই যুদ্ধ চলছে।
সূত্র: এএফপি
এবি
Sunday 2 November 2025
⁞
