সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনের ফুটপাত এখন হকারদের দখলে। প্রতিদিন লাখো দর্শনার্থী ঘুরতে আসেন এখানে। আশপাশের সবগুলো পিকনিক স্পটে টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হলেও সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করা যায় বিনামূল্যে। বছরের পর বছর সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গার সামনের ফুটপাত হকারদের দখলে নিয়ে করছেন লাখ লাখ টাকার ব্যবসা। প্রায় ৩শত মতো দোকান রয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনের অংশে। কুরগাঁও এর রাস্তায় প্রবেশের মুখ থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধের শেষ অংশ পযন্ত সম্পূর্ণ রাস্তা হকারেরা দখলে নিয়ে করছেন ব্যবসা।এতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন পথচারী থেকে শুরু করে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা। বাধ্য হয়ে পথচারীদের ফুটপাত ছেড়ে মহাসড়ক দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হলেও কিছু সময়ের মধ্যে আবার হকারেরা বসে পড়েন। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিতরে পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও তাদের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়না।অনুসন্ধানে উঠে আসে, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফুটপাতের টাকা কয়েকটি ভাগ হয়ে চলে যায় প্রভাবশালী বিএনপি নেতার পকেটে এবং আশুলিয়া হাইওয়ে পুলিশের ওসির কাছে যায় আরেকটি অংশ। পাশাপাশি সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিতরের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নেন একটি অংশ। সাথে আনসার সদস্যদের কাছেও একটি অংশ চলে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের একজন কর্মকর্তা জানান, ভিতরে পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। কিন্তু তাদের কাজ কি। তারা সারাদিন ফাঁড়িতে থাকে। কোন ডিউটি ঠিক মতো করে না। তাদের দায়িত্ব জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনের ফুটপাত হকারদের দখল মুক্ত করা। কিন্তু তারা এখান থেকে বড় একটি অর্থ প্রতিমাসে পাওয়ায় তাদের এই হকার নিয়ে মাথা ব্যথা নাই।তিনি আরও বলেন, বিএনপির এক সাবেক মেম্বার তার দলবল দিয়ে টাকা তোলেন ফুটপাত থেকে। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের সাবেক এক কর্মচারী বলেন, আগে টাকা তুলতো কুরগাঁও এলাকার বিএনপির সাবেক মেম্বার আমিনুল ইসলাম এর কাছের লোক রতন। কিন্তু বর্তমানে আমিনুল মেম্বার নতুন একটি হকারদের কমিটি করে দিয়েছেন সেই দলের কয়েকজন টাকা তুলে। শংকর ও সামছুল টাকা সংগ্রহ করে আমিনুল মেম্বার এর কাছে দেন।তিনি আরও বলেন, ভিতরে আনসার সদস্যরা থাকলেও তাদের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে বলে আসেন ফুটপাত ছেড়ে চলে যেতে। সেইটা শুধু মাত্র লোক দেখানো। ফুটপাতের টাকার একটি অংশ আনসার সদস্যদের পকেটে যায় এবং ভিতরের পুলিশ ফাঁড়ির জন্য একটি অংশ বরাদ্দ থাকায় তাদেরকে পক্ষ থেকে হকারদের দখল মুক্ত করতে কোন পদক্ষেপ দেখা যায় না। মাহবুব নামের একজন পথচারী বলেন, ফুটপাতের জন্য আমরা ঠিক মতো রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারি না।কিছু বললে দোকানদারেরা চাঁদাবাজদের ফোন দিয়ে ডেকে আনেন এবং মারধর করেন। পুলিশ যদি মন থেকে চায় এক ঘন্টার মধ্যে ফুটপাত হকারদের দখল মুক্ত করতে পারে। কিন্তু তারা তা করে না।এর আগে আওয়ামী লীগের সরকারের সময় তাদের নেতাকর্মীরা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনের ফুটপাতে চাঁদাবাজি করতো। সময়ের সাথে সব কিছু পাল্টে গিয়ে এখন করছে বর্তমান কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।জানা যায়, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে হকারেরা ফুটপাত দখলে নিয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, প্রায় ৩ শত মতো ছোট বড় দোকান রয়েছে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনের ফুটপাতে।প্রতিটি দোকান থেকে প্রতিদিন ২ শত থেকে ১শত টাকা সংগ্রহ করেন চাঁদাবাজরা। সেই টাকাই কয়েকজনের পকেটে চলে যায়। এই বিষয়ে পাথালিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল মেম্বার মুঠোফোনে বলেন, এই বেপারে আমি কিছু জানিনা। অনেকজন অনেক কথাই বলে। আপনারা যাচাই-বাছাই করে দেখেন।সাভার হাইওয়ে পুলিশের ওসি সালেহ আহম্মেদ বলেন, আমরা প্রায় সময় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনের ফুটপাতে হকারদের সরিয়ে দেই কিন্তু পরবর্তীতে তারা আবার চলে আসে।সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহমুদুল ইসলাম কে মুঠোফোনে ফোন দিলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনের ফুটপাত হকারদের দখল সম্পর্কে জানতে স্মৃতিসৌধের উপসহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার খান আনু এর দুই দিন তার অফিসে গিয়েও তার দেখা পাওয়া যায়নি।তার মুঠোফোনে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।ইখা
Wednesday 29 October 2025
⁞
