চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পাহাড় এখন আর আগের মতো সবুজ নয়। একসময় যে পাহাড়ে মানুষজন গরু চরাত, বৃষ্টির পানিতে নামত ছড়া—সেই পাহাড়ের বুক আজ বিদীর্ণ। দিন-রাত চলেছে মাটি কাটা। প্রশাসনের অভিযান হয়, জরিমানা হয়, কিছুদিন বন্ধ থাকে—তারপর আবার নতুন করে শুরু হয় সব। যেন জরিমানাও এখন এই ব্যবসারই অংশ।শনিবার (২৫ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ঘেরা এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনী। অভিযানে অবৈধভাবে পাহাড় কাটার দায়ে কেবি–৩ নামক ইটভাটা মালিককে ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৩–এর সংশ্লিষ্ট ধারায় দুই লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।রবিবার (২৬ অক্টোবর) বেলা ১২টার দিকে সময়ের কণ্ঠস্বরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার মাহমুদুল হাসান।উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত মাসে কেবি–৩ নামক ইটভাটার মালিককে অবৈধভাবে পাহাড় কাটার অভিযোগে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। কিন্তু সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে মালিকপক্ষ পুনরায় পাহাড় কেটে মাটি উত্তোলন শুরু করে। বিষয়টি নজরে এলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং দ্বিতীয়বারের মতো কড়া ব্যবস্থা নেন।স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক বছর ধরে এলাকাটির প্রাকৃতিক পাহাড়গুলো অবৈধভাবে কেটে নিচ্ছে একাধিক ইটভাটা মালিক। এতে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ছে।স্থানীয় কৃষক আবদুল মালেক বলেন, আমাদের ছনখোলার পাহাড় আগে সবুজ ছিল, গাছপালা ছিল। এখন ইটভাটার মালিকরা পাহাড় কেটে সমান করে ফেলেছে। বৃষ্টি হলেই মাটি ধসে আমাদের জমিতে নেমে আসে।স্থানীয় বাসিন্দা রওশন আরা বেগম বলেন, বছরের পর বছর পাহাড় কেটে ইটভাটা চলছে। এখন প্রশাসন নামায় কিছুটা স্বস্তি পেয়েছি। আমরা চাই, এসব ভাটা একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হোক।আরেকজন স্থানীয় যুবক জসিম উদ্দিন বলেন, ভাটাগুলো বন্ধ হলে এলাকার মাটি, বায়ু, পরিবেশ সবই বাঁচবে। মানুষ আর ধুলাবালিতে হাঁপিয়ে উঠবে না।স্থানীয় পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, এওচিয়ার সবগুলো ইটভাটা পাহাড় কেটে মাটি নিচ্ছে। প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালায়, কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর খুব একটা তৎপর নয়। তাই অবৈধ ব্যবসায়ীরা আবার সাহস পায়।ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৩–এর ৮(১) ধারায় বলা আছে—সরকারি অনুমোদন ব্যতীত পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ বা পরিবেশের ক্ষতি করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড, বা দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে জরিমানার টাকা পরিশোধ করেই অধিকাংশ ভাটা পুনরায় পুরনো অবস্থায় ফিরে যায়।উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাতকানিয়ার পাহাড় ও পরিবেশ রক্ষায় অভিযান চলবে। কোনো অবস্থাতেই অবৈধ ইটভাটাকে ছাড় দেওয়া হবে না।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার মাহমুদুল হাসান বলেন, এওচিয়া অঞ্চলে পাহাড় কেটে মাটি তোলা বন্ধের জন্য বারবার সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু কেবি–৩ নামক ইটভাটা তা উপেক্ষা করেছে। তাই আইন অনুযায়ী জরিমানা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আবারও এ ধরনের অপরাধ ঘটলে ইটভাটাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।ইখা
Wednesday 29 October 2025
⁞
