ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি কলেজগুলোর জন্য নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যার নাম দেয়া হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি)।  নাম নির্ধারণ করার দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো জারি হয়নি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন তথা অধ্যাদেশ। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়টি কোন কাঠামোতে হবে সেটাও চূড়ান্ত করা হয়নি । এসবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ভর্তি নেয়া হয়েছে ১১ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী।  বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে ভর্তি নেয়া এসব শিক্ষার্থীর এখন পর্যন্ত কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় তৈরী হয়নি। ফলে এক ধরণের ‘পরিচয় সংকটে’ ভূগছেন ভর্তিচ্ছু এসব শিক্ষার্থী।  ইতোমধ্যে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এই সেশনের ভর্তি সমাপ্ত করে ২০২৫-২৬ সেশনে ভর্তি পরিক্ষা আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। তবে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ পূর্বের সেশনের (২০২৪-২৫) ভর্তি কার্যক্রমই সমাপ্ত করতে পারে নি।নির্ধারিত সময়ে ক্লাস শুরু না হওয়ায় এখন সেশনজটের কবলে পড়ছেন ১১ হাজার শিক্ষার্থী। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪-২৫ সেশনের শিক্ষার্থীদের যেখানে প্রথম সেমিস্টার সমাপ্তির দিকে, সেখানে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ এখনো উক্ত সেশনের শ্রেণী কার্যক্রম শুরু করতে পারে নি।চলতি বছর ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন নূরনবী ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয়বারের পরীক্ষার্থী, এতে এক বছর চলে গেছে। এখন ঢাকা সেন্ট্রালে ভর্তির আরও এক বছর পার হচ্ছে। ফলে আমি শিক্ষা জীবন থেকে দুই বছর খোয়ালাম।’  শুধু তিনি নন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগেই ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ১১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এখন পরিচয়হীন। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। বারবার স্মারক লিপি, আন্দোলন ও অনশন করলেও মিলছে না সমাধান। শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো তৈরির আগপর্যন্ত অন্তত কলেজের নিয়মে ক্লাস নেয়ার।  সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি অধ্যাদেশের খসড়ার ওপর মতামত যাচাই-বাছাইয়ে পর্যায়ে রয়েছে। এর মডেল নিয়ে অংশীজনদের মধ্যে মতানৈক্যের পাশাপাশি মৌলিক বিভাগগুলোকে বাদ দেয়াসহ নারী শিক্ষা সংকোচনের আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে।এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা বলছেন, ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা এখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই নেই, ফলে তাদের ক্লাস নেয়া এখতিয়ার বহির্ভূত। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন তারা।অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সব ধাপ সম্পন্ন না করেই শিক্ষার্থী ভর্তি করাকে হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছেন অনেক শিক্ষাবিদ। দ্রুত সরকারকে এই শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পরিচয় নিশ্চিত করার পরামর্শ জানিয়েছেন তারা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মজিবুর রহমান সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এখনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলো না, তার কাঠামো কী হবে, রূপরেখা কী হবে, শিক্ষক কারা হবেন, ক্যাম্পাস কোথায় হবে? এসব কিছু ঠিক না করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা কেবল ভুল না, রীতিমতো অপরাধ।’জানতে চাইলে প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী প্রশাসক অধ্যাপক একেএম ইলিয়াস বলেন, ‘নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরুর বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার উপর নির্ভর করছে। আশা করি খুব দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। সবকিছু প্রস্তুত হয়ে গেলে শীঘ্রই ক্লাস শুরু হবে।’
আরডি
				Tuesday 4 November 2025			
						
		⁞
