Monday 3 November 2025
Home      All news      Contact us      RSS      English
somoyerkonthosor - 18 hours ago

“মুই এহন পোলাপানরে কি খাওয়ামু?”


“মুই এই বয়সে কই চাকরি পামু, পোলাপানরে কি খাওয়ামু” রবিবার (২ নভেম্বর) দিবাগত রাতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন হেনরি বিশ্বাস (৪৭) নামের এক শ্রমিক। তিন সন্তানের জনক হেনরি বিশ্বাস একটানা দেড় যুগ ধরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন বরিশাল শহরের বগুড়া রোডে অবস্থিত অপসো স্যালাইন ফার্মাসিউটিক্যালে। কোন কারণ ছাড়াই হেনরি বিশ্বাসের ন্যায় ওই কারখানার প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিককে ছাঁটাই করেছে কর্তৃপক্ষ।
তিনি (হেনরি বিশ্বাস) জানিয়েছেন-গত ৩০ অক্টোবর ডাকপিয়ন যখন তার হাতে একটি খাম দিয়েছেন, তখনও তিনি বুঝতে পারেননি, ওই চিঠিই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। খুলতেই চোখে পরে লেখা, আপনাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে”। তবে কি কারণে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তা তিনি এখনও জানতে পারেননি। পরে খোঁজ নিয়ে তিনি (হেনরি) জানতে পারেন কারখানার আরো প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিককে চাকরি থেকে ছাটাই করা হয়েছে।
সূত্রমতে, এ ঘটনার প্রতিবাদে গত পাঁচদিনের ন্যায় রবিবার (২ নভেম্বর) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ফার্মাসিউটিক্যালের সামনের ফটকে অবস্থান করে বিক্ষোভ করেছেন ছাঁটাইকৃত কারখানার শ্রমিকরা। ছাঁটাই করা শ্রমিকরা অবিলম্বে তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করে কারখানা চালুর দাবি করেন। এসব শ্রমিকদের চোখে ছিলো জল আর হাতে ছিলো ছাঁটাইপত্র।
রবিবারের এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। যদি এরমধ্যে শ্রমিকদের চাকরিতে পুনর্বহাল করা না হয়, তাহলে মহাসড়ক অবরোধ করাসহ আরও কঠোর কর্মসূচি পালন করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানিয়েছেন, কোনো কারণ ছাড়াই স্টেরিপ্যাক বিভাগের শ্রমিকদের তিনদিনের বাধ্যতামূলক ছুটি দেয় কর্তৃপক্ষ। সেই ছুটির মধ্যে গত ২৮ অক্টোবর প্রত্যেক শ্রমিকের বাসা-বাড়িতে চাকরিচ্যুতির নোটিশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের এমন অমানবিক আচরণ শ্রমিকদের হতাশাগ্রস্ত করে তোলার পাশাপাশি সংক্ষুব্ধ করেছে।
চাকরিচ্যুতির নোটিশ প্রাপ্তির একদিন পর ২৯ অক্টোবর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা প্রতিবাদ স্বরূপ বগুড়া রোডস্থ অপসোনিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন এবং চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছেন।
একাধিক শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, স্টেরিপ্যাক বিভাগে কর্মরত পাঁচ শতাধিক শ্রমিকের প্রত্যেকের বেতন ১২ থেকে ১৬ হাজার টাকা ছিল। কর্তৃপক্ষ তাদের চাকরিচ্যুত করে কম বেতনে কর্মী নিয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পুরানো এবং দক্ষ শ্রমিকদের বরখাস্ত করা হয়েছে।
ছুটির মধ্যে ডাকযোগে নোটিশ পাঠিয়ে শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতির এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সমন্বয়কারী ডা. মনিষা চক্রবর্তী। গত শনিবার এবং রবিবার চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের পুনর্বহালের দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে মনিষা চক্রবর্তী অংশগ্রহণ করেন।
বরিশালে দীর্ঘদিন শ্রমিকের অধিকার নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসা নারী নেত্রী ডা. মনিষা চক্রবর্তী বলেন, আকস্মিক চাকরিচ্যুতির নোটিশ দিয়ে শ্রমিক ছাঁটাই করা অমানবিক আচরণের সামিল। এ ঘটনায় শ্রমিকরা তাদের অধিকার রক্ষায় মাঠে নেমেছেন। এতে তিনিও সম্মতি জানিয়ে পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন-যদি শীঘ্রই শ্রমিকদের চাকরিতে পুনর্বহাল করা না হয়, তাহলে দাবি আদায়ে মহাসড়ক অবরোধ করাসহ আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সেক্ষেত্রে অপসোনিন কর্তৃপক্ষকে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
আকস্মিক শ্রমিক ছাঁটাই এবং প্রতিবাদ আন্দোলন নিয়ে জানতে রবিবার রাতে অপসোনিনের বরিশাল অফিসে ফোন করা হলে পারভেজ নামের এক ব্যক্তি ফোন রিসিভ করলেও তিনি কোনো ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের এই প্রতিষ্ঠানটি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আমির হোসেন আমুর স্বজন আবদুস সবুর খানের। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন সংকট দেখা দেয়। ধারনা করা হচ্ছে-আগামীদিনে প্রতিষ্ঠানটির খরচ কমাতে স্টেরিপ্যাক বিভাগের কর্মচারীদের বাদ দিয়ে কম বেতনে কর্মী নেয়া হতে পারে। অবশ্য এই এধরনের অভিযোগ চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা গনমাধ্যম কর্মীদের কাছে তুলে ধরেন।

এসআর


Latest News
Hashtags:   

পোলাপানরে

 | 

খাওয়ামু

 | 

Sources