নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গত বছরের জুলাইতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের ছোঁড়া ছড়াগুলিতে এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন গাজী সালাউদ্দিন। অপর চোখেও ঝাপসা দেখছিলেন সালাউদ্দিন। মুখমণ্ডলের পাশাপাশি গলায়ও একাধিক গুলি লেগেছিল। চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, গলায় লাগা গুলির স্প্লিন্টার শ্বাসনালি ছুঁয়ে আছে, এটি বের করা দুঃসাধ্য।
রবিবার রাতে পুলিশের গুলিতে লাগা গুলির স্প্লিন্টার শরীরে নিয়েই ১৫ মাস পর মৃত্যুর কাছে হার মানলেন এই জুলাই যোদ্ধা।
এদিকে নিহত সালাউদ্দিনের বড় ছেলে আমির ফয়সাল রাতুল বলেন, ‘চোখ ছাড়াও বাবার সারামুখে, গলায় ও হাতে গুলি লেগেছিল। তবে গলার মধ্যে লাগা স্প্লিন্টারগুলো বের করা সম্ভব হয়নি। ডাক্তার তাকে কথা বলতেই নিষেধ করেছিলেন। গত কয়েকদিন কাশির সঙ্গে রক্ত বের হতো।’
তিনি আরও বলেন, রবিবার সন্ধ্যার পর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে রাত নয়টার দিকে তাকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
নিহত সালাউদ্দিনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এলাকায়। নিজের বাসভবনের দু’টি কক্ষে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের গেজেটভুক্ত অতি গুরুতর আহতের তালিকার ১৩২ নম্বরে ছিল তার নাম। সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি তার কর্মসংস্থানের জন্য মুদি দোকানের মালামালও কিনে দিয়েছিল জুলাই ফাউন্ডেশন। শারীরিক অবস্থার কারণে দোকানে খুব একটা সময় দিতে পারতেন না সালাউদ্দিন। বড় ছেলে রাতুল বসতেন দোকানে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুলাইতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জ শহর যখন উত্তাল, তখন ভূঁইগড় এলাকার একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন সালাউদ্দিন। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে অংশ নেন সালাউদ্দিনও। ১৯ জুলাই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধলে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধের সঙ্গে তিনিও গুলিবিদ্ধ হন। পরে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরদিন তাকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করা হয় তার। কিন্তু এক চোখের দৃষ্টি আর ফিরে পাননি।
সোমবার সকালে গোদনাইল বাজারে সালাউদ্দিনের জানাজার নামাজ শেষে স্থানীয় একটি কবরস্থানে তার দাফন করা হয়েছে বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।এফএস
Monday 3 November 2025
⁞
